ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের দিঘা বিলে হাজারো মানুষের মাছ ধরার মিলন মেলা ঐতিহ্যবাহী ‘হাইত উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) ভোরে এ উৎসব শুরু হয়। নান্দাইল উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার সৌখিন মাছ শিকারিরা জাল-জালি পলোসহ মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যদিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন বিলে। এই হাইত উৎসবকে ঘীরে বিলের পাড়ের বাসিন্দা একদিন আগে থেকেই আত্মীয় স্বজন নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকেই প্রস্তুতি নেয় মাছ শিকার করার।
জানা যায়, অনেক বছর আগে থেকেই খাল-বিল, জলাশয়ে ভরা ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় হেমন্তকালে ‘হাইত উৎসব’ রেওয়াজ চলে আসছে। সেই ঐতিহ্য অনুসরণ করে শুক্রবার দীঘা বিলে হাইত উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর পূর্বে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয় হাইত উৎসব হবে। সেই দাওয়াত পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে সৌখিন মাছ শিকারিরা রাতেই এসে পড়েন বিলের পাড়ে। সেই সঙ্গে স্থানীয়রাও তাদের দূর-দূরান্ত থেকে আসা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা চারকান্দা গ্রামের সোলাইমান জানান, এবার হাইত উৎসবে অন্যান্ন বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি লোক হয়েছে। কিন্তু বিলে মাছ ধরতে না পেরে অধিকাংশ লোক হতাশ হয়ে ফিরেছেন। অনেকেই বিলপাড়ে এসেই চলে গেছেন। হাইত উৎসবের আনন্দটাই মাটি হয়ে গেছে।
হাইত উৎসবে আসা সৌখিন মাছ শিকারি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি এলাকার আব্দুর রহিম, সৈকত, মোজাফফর, শফিকুল ইসলাম বলেন, বিলে মাছ নেই। কচুরিপানায় ভর্তি। শুধু শুধু এত দূর থেকে এসে কষ্ট করলাম, মাছ পেলাম না।
নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের মাছ শিকারি হুমায়ুন, সাইফুল ইসলাম, শহিদ ও চাঁন মিয়া প্রতিবার আমরা হাইত উৎসবে অংশ গ্রহন করি কিন্তু এবারের মতো আর কখনো হয়নি। বড় মাছের সঙ্গে ছোট মাছও বিল শূন্য হয়ে গেছে।
বিলপাড়ের বাসিন্দা খামারগাঁও গ্রামের মিজানুর রহমান খান শাহীন জানান, গত কিছুদিন আগে টানা একদিনের বৃষ্টিতে বিলের আশপাশের সব ফিসারী তলিয়ে কয়েক কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে যায়। সে সময় এই এলাকায় মাছ ধরার হিড়িক পড়েছিল। এ সময় বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ থাকার কথা, কিন্তু বিলে মাছ নেই। সম্ভাব্য ওই সময় বিল থেকে সব মাছ বেরিয়ে গেছে। অথবা বিলে অসংখ্য কচুরিপানা থাকায় মাছ ধরা পড়েনি।
ওই এলাকার গোলাপ মিয়া জানান, কয়েকদিন আগেও বিলে প্রচুর পরিমানে মাছ ছিল। বিলের চারপাশে সব ধান জমি পানিতে তলিয়ে দিয়ে পঁচে দুষিত গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এতে সব মাছ মরে গেছে।
এবার হাইত উৎসবের সেই ইমেজ নেই। এই উৎসব উপলক্ষ্যে আমাদের এলাকায় দূরদূরান্ত থেকে কত মাছ শিকারিরা চলে আসেন পিঠাপুলি নিয়ে। তারা সারা রাত ধরে বিলের পাড়ে বসে সবাই মিলে চিৎকার আর হই-হুল্লোড় করে সেগুলো খায়। আর ভোরের আলো ফুটলেই হাজার হাজার মানুষ একত্রে জাল ও পলোসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে বিলে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। কম-বেশি ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ধরা পড়ে। এই হাইত উৎসবে আনন্দের কমতি হয় না।